স্বদেশ ডেস্ক:
দ্রুত সময়ের মধ্যে নতুন আরেকটি ‘নিরপেক্ষ ও বিতর্কমুক্ত’ জাতীয় নির্বাচনের দাবি জোরাল করার পরিকল্পনা করছে বিএনপি। দলটি এই পরিকল্পনা মাথায় রেখেই সংসদীয় উপনির্বাচন থেকে শুরু করে স্থানীয় পর্যায়ের প্রতিটি নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। দলটির নেতারা বলছেন, এসব নির্বাচনে অংশ নেয়ার অর্থই হচ্ছে, নির্বাচনীব্যবস্থা যে ভেঙে পড়েছে সেটি বারবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়া। পাশাপাশি ‘প্রহসনের ভোটের’ প্রতি মানুষের অনাস্থার দিকটি ফুটিয়ে তোলা।
তবে ভোটের যে ‘নতুন সংস্কৃতি’ চালু হয়েছে, তার সমাধান যে কেবল নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় অংশ নিয়েই সম্ভব নয়, তাও বলছেন বিএনপির নেতারা। এজন্য প্রতিটি নির্বাচনে অনিয়মের প্রতিবাদে দলীয় কর্মসূচি শক্তভাবে পালনেরও সিদ্ধান্ত নিয়েছেন নীতিনির্ধারকরা। তাদের আভাস অনুযায়ী, এসব কর্মসূচিই একটা পর্যায়ে গিয়ে দানা বাঁধবে।
বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, নেতাদের মধ্যে কারো কারো ভিন্ন মত থাকলেও সংগঠনকে চাঙ্গা রাখা, যোগ্য প্রার্থী খুঁজে বের করা ও নির্বাচনীব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে প্রতিটি নির্বাচনে থাকার কোনো বিকল্প নেই বলেই হাইকমান্ড মনে করছে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, দ্রুত সময়ের মধ্যে আমরা সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ একটি নতুন জাতীয় নির্বাচনের দাবি বারবার তুলে ধরছি। আর এই দাবিকে জোরালো করতেই যেটুকু স্পেস আছে, সেটুকু কাজে লাগানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, ক্ষমতাসীন দল নির্বাচনী ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণ ভেঙে ফেলেছে। মানুষের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়ে তারা গণতন্ত্রের লেবাসে একদলীয় সরকার প্রতিষ্ঠা করেছে। সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ একটি নির্বাচন ছাড়া গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনা কোনোভাবেই সম্ভব নয়।
বিগত তিনটি জাতীয় নির্বাচনকেই প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন হিসেবে মনে করে বিএনপি। এর সাথে দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্রও জড়িত রয়েছে বলে দলটি মনে করে। ২০০৮ সালের ২৮ ডিসেম্বর সেনাসমর্থিত এক-এগারোর সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে অংশগ্রহণ প্রশ্নে শুরুতে বিএনপি জোটে দ্বিমত থাকলেও ‘নানামুখী চাপে’ তারা শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে অংশ নেয়। দলটির নীতিনির্ধারক পর্যায়ের অনেক নেতা ওই নির্বাচনের আগেই মনে করতেন, তাদের কয়েকটি আসন ‘ধরিয়ে’ দেয়া হবে। নবম সংসদের সেই নির্বাচনে বিএনপি জোট ৩০টি আসন লাভ করে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করে দেয়ার পটভূমিতে নিরপেক্ষ একটি ব্যবস্থার অধীনে নির্বাচনের দাবি দীর্ঘ আন্দোলনের পরেও পূরণ না হওয়ায় দশম সংসদের জাতীয় নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়ে দলটি বয়কট করে। ওই নির্বাচন বিএনপিসহ আরো ২৮টি রাজনৈতিক দল বয়কট করলেও পরবর্তী আরো পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকতে আওয়ামী লীগকে তেমন বেগ পোহাতে হয়নি। ‘কৌশলী কূটনৈতিক’ তৎপরতার মাধ্যমে তারা উদ্ভূত পরিস্থিতি সামাল দিতে সক্ষম হয় এবং একপর্যায়ে বিরোধী শক্তিকে উল্টো চাপে ফেলে দেয়। এরই ধারবাহিকতায় একাদশ সংসদ নির্বাচনের এক বছর আগে ২০১৮ সালে দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত হয়ে কারাবরণ করেন সরকারের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী দল বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। খালেদা জিয়াবিহীন নির্বাচনী মেরুকরণে শত বিপত্তি উপেক্ষা করেই নির্বাচনে অংশ নেয় বিএনপি-ঐক্যফ্রন্ট। এ নির্বাচনে মাত্র সাতটি আসন লাভ করে তারা।
বিএনপির সিনিয়র এক নেতার বক্তব্য অনুযায়ী-পরপর তিনটি নির্বাচনে এমন অনাকাক্সিক্ষত পরণতির পর স্বাভাবিকভাবেই দলটির নেতাকর্মীরা হতাশ হয়ে পড়েন। তবে সেই পরিস্থিতি তারা আবার কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয়েছেন। সংগঠনকে নতুন করে শক্তিশালী করা হচ্ছে। শিগগিরই পরিস্থিতির পরিবর্তন হবে, এমন আশা তারা নেতাকর্মীদের মধ্যে ধীরে ধীরে জাগিয়ে তুলছেন। করোনা মহামারী কেটে গেলে মাঠের রাজনীতিতে নেতাকর্মীদের সম্পৃক্ততা আরো বাড়বে।
বিএনপি আসন্ন সব উপনির্বাচন ও স্থানীয় নির্বাচনে অংশ নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সর্বশেষ ঢাকা-৫ উপনির্বাচনে অনিয়মের প্রতিবাদে বিক্ষোভ হয়েছে সারা দেশে। আগামীকাল ১২ নভেম্বর ঢাকা-১৮ আসনে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ নির্বাচনে কোনো অনিয়ম হলে দলটি এর প্রতিবাদেও কর্মসূচি পালন করবে। আগামী দিনের সব কর্মসূচি থেকেই নতুন নির্বাচনের দাবি জোরালোভাবে তুলে ধরতে শীর্ষ নেতাদের পরামর্শ দেয়া হয়েছে। গতকাল এ নিয়ে একটি সংবাদ সম্মেলনও করেছে দলটি। একই সাথে কূটনৈতিক তৎপরতার দিকেও বিএনপির নজর রয়েছে। মার্কিন নির্বাচনের পর জো বাইডেনের সরকারের সাথে সম্পর্ক নিবিড় করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
জানা গেছে, ঢাকা-১৮ আসনের উপনির্বাচনে যারা দলের সম্ভাব্য প্রার্থী ছিলেন, তাদের মধ্যে দ্বৈরথ এবং স্থানীয় পর্যায়ে নেতাকর্মীদের বিভেদ পুরোপুরি ঘোচানো সম্ভব হয়নি। তবে বিএনপির হাইকমান্ড সাংগঠনিক দিক থেকে এখন পর্যন্ত কিছু কিছু অর্জন ইতিবাচক হিসেবেই দেখছেন। দলের সিনিয়র এক নেতা বলেছেন, এই নির্বাচনে বড় শোডাউন দিতে তারা সক্ষম হয়েছেন। দলের নেতারা মাঠে নেমে গণসংযোগে অংশ নিয়েছেন। এই আসনের জন্য ‘স্থানীয় একাধিক প্রার্থী’ তারা খুঁজে পেয়েছেন, যা ভবিষ্যতে মহানগরের রাজনীতিতে এবং নির্বাচনী রাজনীতিতে কাজে লাগানো সম্ভব হবে।